প্রিয় ভালোবাসা, তোমার উপেক্ষা
-রীণা চ্যাটার্জী
প্রিয় ভালোবাসা,
তোমায় আকাশ ভেবেছিলাম,মেঘ হয়ে ভাসতে চেয়েছিলাম তোমার বুকে। এ পাশ ওপাশ সবটুকু জুড়ে নিজের মতো করে উড়ে বেড়াতাম আলতো ছোঁয়ায়, কখনো তুমি তোমার আলিঙ্গনে মিশিয়ে নিতে নিজের সাথে… একাত্ম হয়ে ওঠার সেই মুহূর্তে বিলীন হয়ে যেতাম তোমার মাঝে, থাকতো না আর আলাদা কোনো অস্তিত্ব…
তোমাকে ভেবেছিলাম চঞ্চল সমীরণ, আমি সবুজ বনানী, কিংবা ধানসিঁড়ি। দুলিয়ে দিয়ে যেতে আসা যাওয়ার প্রতি মুহূর্তে আমায় আলতো ছোঁয়ায়… আমি ব্যাকুল হয়ে তোমাকে আঁকড়ে ধরার আশায় মেলে ধরতাম সমস্ত অবয়বটুকু…. পারতাম না তোমাকে ছুঁতে, তুমি শুধুই চঞ্চলতা নিয়ে আসতে আমার কাছে! তোমার লুকোচুরির খেলায় অস্থির হয়ে যেতাম ধরা-অধরার মাঝে, শ্রান্ত আমি হয়তো বা তোমাকে না পাওয়ার অভিমানে, তোমার আলিঙ্গনের বৃথা মনোবাসনায় হতাম ক্ষণিক স্তব্ধ। তখন তুমি ফিরে আসতে, বেঁধে নিতে দৃঢ় আলিঙ্গনে…
তুমি যদি হতে নীল সাগর, আমি বেলাভূমি… দুরন্ত গর্জনে ছুঁয়ে যেতে আমায়– আমার মন,সত্তা তোমার পিছনে ছুটে যেত জগৎ সংসার সব ভুলে,বাকী অবয়বটুকু নীরবে উন্মুখ হয়ে তোমার ফিরে আসার অপেক্ষায়। তুমি আসতে ফিরে–ক্ষণিকের জন্য, ভরিয়ে দিয়ে যেতে। রিক্ত, সিক্ত আমি আবার প্রতীক্ষায়.. আমার হৃদয় জুড়ে তখন শুধু তোমার স্পর্শের দুরন্ত ছন্দ। অনন্তকাল এক হয়ে মিশে যেত, থাকতো না কোনো সময়ের গণ্ডী আমাদের মাঝে…
তুমি যদি বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়তে আমার মাঝে, আন্দোলিত হতাম প্রতি অনু-পরমাণু জলকণায়। আমার উন্মুখ হয়ে থাকার অবসান হতো তোমার অঝোর ধারায়। তোমার ধারায় মিলে মিশে একাকার হয়ে গরবিনী আমি নদী হয়ে বয়ে যেতাম তোমার সাথে নীরবে নিভৃতে। ভেসে চলতাম অভিন্ন হৃদয়ে.. জনরোলে মিশে যাওয়া নিবিড় বন্ধনে বন্দী দু’টি মন।
হঠাৎ শিশির ছোঁয়ায় কেটে গেল তন্দ্রা– সুখের আবেশ কেটে স্বপ্নরা হারিয়ে গেল, ফিরে এলাম কঠিন বাস্তবে। আকাশ-কুসুম চিন্তায় অলীক স্বপ্নে বিভোর হয়ে ছিলাম। তোমাকে প্রেমিক ভেবে, মুগ্ধতার রেশ নিয়ে ভুলে গিয়েছিলাম নিজের স্বরূপ…. তুমি যে চিরন্তন এক প্রেমিক, কখনো খেয়ালী বশে ক্ষণিকের আলাপে এসেছিলে আমার কাছে। আমি অবোধ ভেবে নিলাম সত্যি! ভুলে গেছিলাম, গোলাপ তো নয়, যে তার রূপে বিমোহিত হয়ে বক্ষলগ্ন করে রাখবে আজীবন, ব্যথা পাবে তার ঝরে যাওয়ার জন্য, হৃদয় মথিত কাব্যে স্থান পাবে তোমার, সে যে তোমার ‘চিরন্তনী’। আমি কচুরিপানা, অকারণে ফুটে ওঠা এক অনামী ফুল… যাকে ঘিরে আসতে পারে চোখের ক্ষণিক মুগ্ধতা, কিন্তু মনের চিরন্তনী হবার যোগ্যতা তো রাখিনা। খেয়ালী নয় খামখেয়ালীর সাথী আমি,ঝরে যাওয়ায় ব্যথা তো অনেক দূরের, মনেও তো পড়বে না আমাকে… বড়ো অবহেলায় অপ্রয়োজনীয়। স্বপ্ন দেখার ধৃষ্টতা আমার ছিল তাই অলীক স্বপ্ন ভঙ্গের দায় সম্পূর্ণ আমার রেখেই বাস্তবকে সাথী করে নিলাম। নাহ্.. কোনো ইচ্ছে ,আশারা হাত ধরে নেই আমার। শুধু জোনাকি জ্বলা আলোর মাঝেই খুঁজবো নিজেকে এবার, জ্যোৎস্না থাক তোমার ভালোবাসার মধুরাতের জন্য।
-তোমার উপেক্ষা
ভালোবাসায় জীবিত থাক ভালোবাসা, মধুরাতে জ্যোৎস্না থাক সবার।
ধন্যবাদ। তবে উপেক্ষার জন্য যে মধুরাতের জ্যোৎস্না থাকে না বন্ধু…
অসাধারণ লাগলো লেখাটা!!!
আপ্লুত। ধন্যবাদ
বাহ, অপূর্ব লেখা, ভীষন ভালো লাগলো…
অশেষ ধন্যবাদ
অসাধারণ এক লেখনী
অশেষ ধন্যবাদ